কর ধার্যের নীতিমালা বর্ণনা কর

প্রশ্ন : করের নীতিমালা বর্ণনা কর। 

অথবা, করের কানুন বর্ণনা কর ।

উত্তর : জনসাধারণের যাতে কর দিতে অসুবিধা না হয় এবং কারো উপর যাতে কোনোরূপ অবিচার না করা হয় তার জন্য সরকার করধার্যের সময় কতকগুলো নীতি বা সূত্র মেনে চলে,

সেগুলোকে করের নীতি বা কানুন বলা হয়

প্রখ্যাত অর্থশাস্ত্রবিদ এডাম স্মিথ (Adam Smith)

করধার্যের চারটি নীতির উল্লেখ করেছেন, এগুলো হলো :

১. সামর্থ্য বা সমতার নীতি : প্রত্যেক নাগরিক নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সরকারকে কর প্রদান করবে। সামর্থ্য অনুযায়ী করভার বহন করার ফলে যে ত্যাগ স্বীকার করে, কর প্রদানের মাধ্যমে উক্ত ত্যাগের পরিমাণে আসে এবং সমাজের সামগ্রিক করভার সর্বাপেক্ষা কম হয় ।

২. নিশ্চয়তার নীতি : প্রত্যেক করদাতা কি পরিমাণ কর প্রদান করবে এবং কর প্রদানের সময় পূর্ব হতেই নির্দিষ্ট করে দিতে হয় নিশ্চয়তার নীতি অনুসারে। করদাতাগণ যদি পূর্ব হতেই নিশ্চিতভাবে জানতে পারে তাকে কি পরিমাণ কর কখন দিতে হবে। তাহলে তারা বুঝতে পারে কর প্রদানের পর কি পরিমাণ আয় অবশিষ্ট থাকবে এবং তদনুযায়ী সে তার ব্যক্তিগত বাজেট প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে

৩. সুবিধার নীতি : এ নীতি অনুসারে যে সময়ে এবং যে পদ্ধতিতে কর প্রদান করদাতাগণের পক্ষে সুবিধাজনক সে সময়ে এবং সে পদ্ধতিতে কর আদায় করা উচিত। যেমন – কৃষকের নিকট থেকে ফসল তোলার পর এবং ব্যবসায়ীদের নিকট হতে হিসাব বছর শেষে কর আদায় করলে ভালো হয় ৷

৪. মিতব্যয়িতার নীতি : এ নীতি অনুযায়ী কর আদায় করার ব্যয় যথাসম্ভব কম হওয়া উচিত। কর আদায় বাবদ যে রাজস্ব আদায় করা হয় তার অধিকাংশ যদি কর আদায়ের জন্য ব্যয়িত হয়ে যায় | তাহলে এরূপ করধার্য করার আয় যৌক্তিকতা থাকে না। সুতরাং যথাসম্ভব কৃচ্ছতার নীতি অনুসরণ করে কর আদায় করা বাঞ্ছনীয়।

আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ উপরিউক্ত চারটি নীতি ছাড়াও আরও চারটি কথা উল্লেখ করেছেন; যাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো : 

১. উৎপাদনশীলতার নীতি: এ নীতি অনুযায়ী কর উৎপাদনক্ষম হওয়া বাঞ্ছনীয়। কর ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে প্রচুর অর্থাৎ যথাসম্ভব রাজস্ব সংগ্রহ করা যায় এবং ব্যবসায় বাণিজ্য প্রসার ও শিল্প- প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে ।

২. স্থিতিস্থাপকতার নীতি : করধার্যের এ নীতি অনুসারে করধার্য এমনভাবে করতে হবে যেন প্রয়োজনবোধের করের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায়। আধুনিক যুগে করের এ স্থিতিস্থাপকতার নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

৩. সরলতার নীতি : এ নীতি অনুসারে কোনো দেশের কর ব্যবস্থা সহজ ও সরল হওয়া উচিত যাতে করদাতাদের পক্ষে তা বুঝতে কোনোরূপ অসুবিধা না হয়। করের নিয়মকানুন সহজ ও বোধগম্য হলে কর প্রদান করা করদাতাদের পক্ষে সহজ হয়।
৪. বিভিন্নতার নীতি : এ নীতি অনুসারে কর ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি কর দিতে বাধ্য থাকে । এজন্য কর ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রকার কর থাকতে হয় যাতে করভার সমাজের সকলের উপর সমভাবে বণ্টিত হয়।

1 thought on “কর ধার্যের নীতিমালা বর্ণনা কর”

Leave a Comment